মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১১

আলো নিয়ে খেলো! ;);)

আমি ফটোগ্রাফিং পারি না...ভাল ক্যামেরাও নাই, খুবই নরমাল একটা ডিজিক্যাম। গরীবের শখ থাকতে নাই, তাও এই ক্যামেরা নিয়াই কিছু একটা করার চেষ্টা করি আর কি! /:) /:)


একদিন রাতে বের হৈছিলাম রাতের ঢাকার ছবি তুলব বইলে। কিন্তু হাতের কাপাকাপির চোটে কি তুলতে গিয়া কি তুল্লাম, কি করতে গিয়া কি যে হইল, কিছুই বুঝলাম না...হেহহেহহেহহেহ!:P:P

আপনারা দেখেন তো কিছু বুঝেন কিনা, বুঝলে জানাইয়েন।;);)

১।
___আলোকচক্র

২।
___উৎসবের উৎসাহে

৩।
___টইং

৪।
___

৫।
___নীলাভ

৬।
___বায়ুকল

৭।
___আলোরছটা

৮।
___অলীক সর্প

এক অপূর্ণ মুক্তিযোদ্ধার গল্প

মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করা হচ্ছে।

পত্রিকায় খবরটি পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেল্লেন ফারুক সাহেব। তার বয়স প্রায় ৫৫, আর দুইবছর পরই তাকে অবসরে যেতে হবে। সেদিন যদি ঐ সিদ্ধান্তটি না নিতেন, তাহলে আজকে তিনিও ৫৯ বছর বয়স পর্যন্ত চাকুরী করতে পারতেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সবার সম্মান পেতেন, সবচেয়ে বড় কথা ১৯৭১ সালে যাদের কোন খবর ছিল না, মুক্তিযুদ্ধে যাবার বদলে যারা পালিয়ে গিয়েছিল ভারতে, সেইসব “মুক্তিযোদ্ধা”র সামনে আজকে তাকে মাথা নিচু করে দাড়াতে হত না!

আনমনা হয়ে গেলেন ফারুক সাহেব..................
....................................

আগস্ট ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে পরিকল্পনাহীন ও অপ্রস্তুত মুক্তিবাহিনী ততদিনে সংঘটিত হয়ে সারাদেশে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। ফারুক মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে। কিন্তু ওর বয়স কম বলে ওদের এলাকার আলোয়ার ভাই, যিনি যুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক ছেলেদের ভারতে ট্রেনিং নিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, তিনি ওকে নিতে রাজি নন। যদিও ফারুককে দেখে মনে হয় না ওর বয়স মাত্র ১৫, বয়সের তুলনায় বেশ লম্বা-চওড়া সে। তারপরও আনোয়ার ভাই রাজি হন না।
--আরে শোন ব্যাটা, এই যুদ্ধ কি এত সহজেই শেষ হবে রে! কত্তদিন চলবে! তুই আরেকটু বড় হ, তখন তোকে নিয়ে যাব।

আনোয়ার ভাইয়ের এমন আশ্বাসেও ফারুকের মন ভরে না, যুদ্ধে যে ওকে যেতেই হবে!

তার এই মনোভাবের কথা বাসার সবাই জেনে গেছে। সবাই তো হতবাক, এই পিচ্ছি ছেলে যুদ্ধে যেতে চায়! ওর আব্বার কড়া নির্দেশে বাসার সবাই ওকে চোখের আড়াল হতে দেয় না। ফারুকের মনোকষ্ট আরো বাড়ে!


সেপ্টেম্বর ১৯৭১। একদিন হঠাৎ ও খবর পায় আনোয়ার ভাই রাজাকারদের চোখে পরে গেছেন, ওরা তাকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। তিনি আজ রাতেই তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে যাবেন। আনোয়ার ভাইয়ের সাথে শেষ দেখা করতে ছুটল ফারুক।
--ভাই,আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলেন ভাই, প্লিজ! আমি আপনার সাথে সাথে থাকতে চাই, যুদ্ধ না হয় না-ই করলাম, মুক্তিযোদ্ধাদের ফুট-ফরমায়েশ খাটতে পারলেও আমি খুশি!

এমন আব্দার আর ফেলতে পারলেন না আনোয়ার ভাই।

ঐদিন রাতে বাসার সবার চোখ ফাকি দিয়ে ফারুক ওর এক চাচাতো ভাইকে সাথে নিয়ে আনোয়ার ভাইয়ের সাথে পালিয়ে যায়।

এরপরের কাহিনী যেন অনেক দ্রুত ঘটে যায়। ইন্ডিয়ায় ক্যাম্পের কমান্ডার ফারুককে দেখে ওকে গেরিলা ট্রেনিং নেয়ার পারমিশন দিয়ে দেন। ২টা মাস যেন চোখের পলকেই চলে যায়। পুরো ২মাস ট্রেনিং নেয় সে। কি যে কষ্ট করেছে এই দুইমাস! ও একটু মোটা ছিল বলে শুরুতে খুব কষ্ট হত ওর। কিন্তু যুদ্ধ করবে, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে দেশ স্বাধীন করবে-এই খুশিতে সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছে ও। পোকা আর কাকরযুক্ত ভাত-রুটি খেয়েছে, অনেকসময় না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছে কত রাত! দাড়ি-গোফের জংগল চাপা ভেঙ্গে যাওয়া মুখটা ডেকে দিয়েছে। তারপরও হাল ছাড়েনি ও। এ যেন যুদ্ধক্ষেত্রে যাবার আগের যুদ্ধ!

ডিসেম্বর, ১৯৭১। ০৫ ডিসেম্বরে ওর ট্রেনিং শেষ হয়। দেশে ঢুকে যুদ্ধ করার পারমিশন পেয়ে যায়। ও এখন সব পারে; স্টেনগান চালাতে পারে, থ্রীনট থ্রী চালাতে পারে, গ্রেনেড ছুড়তে পারে প্রায় নিখুত নিশানায়! নিজেকে পুরোদস্তুর মুক্তিযোদ্ধা লাগছে এখন ওর।

দেশে প্রবেশ করে ও ১০ ডিসেম্বর। ততদিনে দেশের অনেক অঞ্চল স্বাধীন হয়ে গেছে, মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার কাছাকাছি চলে গেছে।

১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১। ফারুকরা এখন যে এলাকায় আছে সেটা পাকবাহিনীর দখলে থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তাদের তুমুল সংঘর্ষ চলছে। ফারুকরা এসেছে রিজার্ভ বাহিনী হিসেবে, যদি অগ্রগামীরা ব্যর্থ হয়, তখন ওদের ডাক পরবে।

পুরো একদিন অপেক্ষা করার পরও ফারুকদের ডাক আর আসে না। তার আগেই অগ্রগামীরা পাকিদের হারিয়ে দেয়। অনেক আনন্দের মাঝেও সরাসরি যুদ্ধ করতে না পারায় কিছুটা হতাশ হয় ফারুক।

ফারুকদের অন্য একটা জেলায় যাওয়ার নির্দেশ আসে। সেখানে পৌছায় ওরা ১৫ ডিসেম্বর রাতে। খবর আসে মিত্র বাহিনী ঢাকা দখল করেছে। পাকিদের আত্মসমার্পন এখন সময়ের ব্যপার।

১৬ ডিসেম্বর রাতে যখন ওরা অপারেশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই খবর আসে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে!

আহা কি আনন্দ! ফারুকরা ফাকা গুলি ফুটিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে! দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, আমরা এখন মুক্ত!! সরাসরি যুদ্ধ করতে না পারার হতাশা এই ব্যপক আনন্দে চাপা পরে যায়।

গ্রামে ফিরে আসে ফারুক। ওকে নিয়ে সবার মাঝে আনন্দ। সবাই শুধু জানতে চায় ও কয়টা পাকি মেরেছে, কয়টা যুদ্ধ করেছে, কি করেছে না করেছে-এসব। শুধু ট্রেনিং নিয়েছি, যুদ্ধ করার সুযোগ পাইনি-ওর এই জবাবে কিছুটা হতাশ হয় সবাই। কয়েকজন মুরুব্বী তো বলেই ফেলেন, “তাইলে কি যুদ্ধে গেলা বাবা!”
এসব নেতিবাচক কথায় হতাশ ফারুকের হতাশা আরো বাড়তে থাকে। আসলেই তো, কিসের মুক্তিযোদ্ধা ও! ট্রেনিং নিলেই কি মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায়!

এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। মাথা গরম করে ফারুক ঠিক করে অস্ত্র জমা দিতে ও নিজে যাবে না, আনোয়ার ভাইয়ের কাছে অস্ত্র দিয়ে আসবে, আর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাতেও নাম ওঠাবে না!

রক্তগরম ফারুককে তার সিন্ধান্ত থেকে টলাতে পারে না আনোয়ার ভাইসহ কেউই!

................................................
..................

আজকে ৪০ বছর পর এসে সেই অপরিনত বয়সে নেয়া সিদ্ধান্তটার কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায় ফারুক সাহেবের। যখন দেখেন যুদ্ধ বা ট্রেনিং করা তো দুরের কথা, ভারতে আশ্রয় নেয়া কিছু সুবিধাবাদী লোকজন , যারা যুদ্ধ পরবর্তী কালে মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাংগিয়ে দেশে লুটপাট চালিয়েছে, সেই তারাই যখন সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধা বনে যায়, তাদেরই নাম যখন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় শোভা পায়, তখন তিনি হতাশ হন। তার হতাশা ক্রোধে পরিনত হয় যখন দেখেন সেই সময়ের কুত্তা রাজাকাররাও আজকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবী করেন নিজেদের! ঘেন্না হয় নিজের উপর, কেন তখন একটা রাজাকারও মারতে পারলেন না!

এই হতাশা, নিঃস্ফল ক্রোধ আর ট্রেনিংয়ের সময়কার কিছু স্মৃতি—এই নিয়েই এখন বেচে আছেন এই অপূর্ণ মুক্তিযোদ্ধা......

____________________________
________________________________

উপরে বর্ণিত গল্পটি বানানো নয়, ফারুক সাহেব আমার পিতা। তিনি নিজেকে হতভাগ্য মনে করেন, কিন্তু আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্ব করি! তিনি সরাসরি যুদ্ধ না করলেও তার মত আর কয়জন সাহসী কিশোর একাত্তরে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য এত অস্থির হয়েছিল? ট্রেনিংয়ের কষ্টকর ধাপগুলো কয়জন পার হতে পেরেছিল? কাগজে-কলমে তিনি মুক্তিযোদ্ধা না হতে পারেন, কিন্তু আমার কাছে তিনি অন্যসব মুক্তিযোদ্ধার মতই একজন, তিনিই আমার হিরো!
স্যালুট টু হিম!

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১১

কাকতলীয়

--হ্যালো, সানি, আজকে ফ্রি আছিস???
--হুমমম......কেন??
--আমার সাথে ইস্টার্ন প্লাজায় চল, সেট কিনব। পারভেজও যাবে।
--আরে তাই নাকি!! টাকা ম্যানেজ করতে পারলি শেষ পর্যন্ত!
সানি একই সাথে অবাক ও খুশি হয়। জনি বেচারা অনেকদিন ধরে সেট কেনার জন্য ঘুরছে!
--অনেক কষ্টে, বহুত কাহিনী কইরে টাকা ম্যানেজ করলাম।
--আচ্ছা ঠিক আছে, তুই আর পারভেজ ১০ নম্বর দাড়া। আমি আসতেছি ২০মিনিটের মধ্যে।

জনি অনেকদিন ধরেই একটা মোবাইল সেট কেনার চেষ্টা করছে। ৫মাস আগে ওর আগের সেটটা ছিনতাই হয়ে যায়। এরপর ও বাসায় অনেক বলেছে একটা সেট কিনে দেয়ার জন্য। কিন্তু ওর আব্বা ওর কোন কথা শুনতে রাজি নন। একে তো প্রায় সব কয়টা পাবলিক ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়েও কোথাও চান্স পায়নি। দ্বিতীয়বার আবার ট্রাই করবে বলে কথা দিলেও বই-খাতা ছুয়েও দেখে না। সারাদিন পিসি নিয়ে বসে থাকে।

--তোর আবার মোবাইলের কি দরকার?? সারাদিন তো বাসায়ই বইসে থাকিস।
--আরে বাসায় বসে থাকি বলেই তো বন্ধুদের সাথে কন্টাক্ট করার জন্য মোবাইল দরকার!
--আরে কিসের কন্টাক্ট!!! তোর সব বন্ধুরা কোথাও না কোথাও ভর্তি হয়ে গেল। তুই-ই খালি কোথাও চান্স পেলি না। আমার এত্ত এত্ত টাকাও নেই যে তোকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়াব! এইবার পরীক্ষাটা ভাল করে দে বাপ। কোথাও ভর্তি হ! তখন তোকে একটা দামী সেট কিনে দেব। কেমন?

জনি এরপর আর কথা বাড়ায় না। কিন্তু এখন ওর মোবাইল না হলে চলবেই না! কারন গত মাসে "বিশেষ" একজনের সাথে ওর পরিচয় হয়েছে। ওর ছোট মামার বিয়েতে। শিলা, ওর ছোট মামীর বোনের মেয়ে। প্রথম দেখাতেই প্রেম যাকে বলে! এইচএসসি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। বিয়ের দিনই ও শিলার মোবাইল নাম্বার ম্যানেজ করে ফেলেছিল। সাহসের অভাবে ওদের টিএন্ডটি থেকে ফোন দিতে পারেনি। মোবাইল ওকে কিনতেই হবে! এক্ষুনি!!!!!!!

অনেক কষ্টে ৭০০০ টাকা ম্যানেজ করেছে। ওর আম্মু নিজের জমানো ৩০০০ টাকা দিয়ে দিয়েছে। ওর নিজের জমানো ছিল ১৫০০ টাকা। আর ওর বৃদ্ধ দাদার কাছ থেকে এনেছে ২৫০০ টাকা। দাদুর পেনশনের টাকা থেকে অল্প অল্প করে টাকা জমান। সেখান থেকেই ২৫০০ টাকা দিয়েছেন তিনি।

জমানো সব টাকাই নিয়ে এসেছে ও। বেকার মানুষ, তাই বাসা থেকে এখন কোন হাতখরচই পায় না। এই ১৫০০ টাকাই ছিল সম্বল। এই টাকাও শেষ হয়ে গেল!! ধুররর........যা হবে দেখা যাবে। আগে মোবাইল কিনি--এসব সাত-পাচ ভাবতে ভাবতে জনি মিরপুর-১০ নম্বর মোড়ে চলে আসল। সানি আর পারভেজও চলে এল। সবাই মিলে বাসে উঠল ইস্টার্ন প্লাজার উদ্দেশ্যে.................................


--কিরে জনি, আর কত ঘুরাবি। রোজা রাইখে এত ঘুরাঘুরি করা যায় নাকি!!!
পারভেজ বিরক্তিবোধ করে। এমনিতে সব সময় চুপচাপ থাকে, কিন্তু এই রোযার দিনে অহেতুক ঘুরাঘুরি করতে ওর ভাল্লাগছে না। একটা মোবাইল কিন্তে এসে জনির এত ঘুরাঘুরি আর বাছাবাছিতে সানিও খানিকটা বিরক্ত। কিন্তু ও পারভেজের মত জনির মুখের উপর কিছু বলতে পারল না। বেচারা এত শখ করে একটা সেট কিনতে এসেছে!
--আর একটু দেখি দোস্ত। ২টা দোকান ঘুরে যদি ২০০ টাকা বাচাইতে পারি তাহলে তো তোদেরই লাভ। তোদের পেট ভইরে ইফতারী খাওয়াব। প্লিজ রাগ করিস না।
পারভেজ আর কথা বাড়ায় না। জনিও বুঝতে পারে বন্ধুদের মনের কথা। কিন্তু ও কি করবে! চায় একটা ভাল সেট, বেশি ফিচারওয়ালা, কিন্তু দাম হতে হবে ৬৫০০-৭০০০ এর মধ্যে। এসব ভাবতে ভাবতে দাড়ায় এক দোকানের কাচের ডিসপ্লের সামনে।

--বস, একটা ভাল সেট আছে, সেকেন্ড হ্যান্ড, অল্প ইউজ হইছে।
হঠাৎ করেই জনির পাশ থেকে এক ছেলে ওর উদ্দেশ্য কথাগুলো আস্তে করে বলে উঠে। ছেলেটিকে অনেক্ষন ধরেই দেখছে জনি। সেও ওদের মতই এ দোকান ও দোকান ঘুরছে। এর আগে ভাল করে দেখার প্রয়োজন মনে করেনি। এবার তাকাল ভাল করে। উচ্চতায় ওর সমানই প্রায়, বয়স হয়ত ওদের চেয়ে ২-৩ বছর বেশি হবে। ভদ্র পোষাক পড়া। সবুজ টি-শার্ট আর কালো প্যান্ট। টি-শার্টের উপরে বড় করে লিখা "GAP"।
--লাগবে বস?
--কি সেট?
জনি খানিকটা অনাগ্রহের সুরে বলে ওঠে। খুব একটা উৎসাহী নয় সে সেকেন্ডহ্যান্ড সেট কেনার ব্যপারে।
--নকিয়া এন৭০।
সেটের নাম শুনে জনির সামান্য যে উৎসাহটুকু ছিল তাও চলে যায়!! নতুন মডেলের দামী সেট। সেকেন্ডহ্যান্ড হলেও দশ-বারো হাজারের কমে তো দেবেই না!!
--দেখি সেটটা।
জনি বাধা দেয়ার আগেই সানি বলে উঠে। ও উৎসাহী। পারভেজ একপাশে চুপ-চাপ দাড়িয়ে ওদের কথা শুনছে।
পকেট থেকে সেটটা বের করে ছেলেটি। আসলেই কন্ডিশন বেশ ভাল। প্রায় নতুনের মতই লাগছে। জনি আর সেট দেখতে আগ্রহী হয় না। এই সেট বারো হাজারেও দেবে বলে মনে হয় না!
কিন্তু সানি খুটিয়ে খুটিয়ে সেট দেখতে থাকে। গান বাজায়, ছবি তোলে। সেটটা ওর মনে ধরেছে!
--কি বস, সেট পছন্দ হইছে না?
--হুমমম......ভালোই। তা কত নিবেন?
সানি কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে।
--বস একদম অরিজিনাল সেট। বড় ভাই বাইরে থেকে আনছে। বেচতাম না, কিন্তু টাকার সমস্যায় পরছি, তাই বেচতেছি।
--ও আচ্ছা!
--আপনারা আমার ভাই-বেরাদারের মতই। আপনাদের কাছ থিকা বেশি নিমু না। আমারে ৯০০০ টাকা দিয়েন।
সানি-জনি দুইজনই খুব অবাক হয়। নকিয়া এন৭০ নতুন সেটের দাম ১৭০০০ এর কম না। আর এই ছেলের সেটটা তো খুব একটা পুরনোও না।
জনি আবার আগ্রহী হয়ে ওঠে। যদি দামাদামী করে ৭০০০ এ কিনতে পারে!!!
--ভাই আপনি তো বেশি চাচ্ছেন। সেকেন্ডহ্যান্ড সেট এত বেশি দিয়ে কেউ কিনে নাকি! এই দামে তো নতুন সেট পাওয়া যায়।
--কি কন বস! এই সেট এত কমে কেউ দিত না। টাকার দরকার বইলাই কমে ছাইড়া দিতেছি।
--আমি এত দিতে পারব না।আমার বাজেট এত না।
--ভাই এর কমে আর পারা যায় না। কিন্তু আপনাদের আমার ভাল লাগছে। আমার শখের জিনিসটা আপনার কাছে গেলে আমারই ভাল লাগবে। তা শুনি আপনার বাজেট কত।
--৬৫০০।
--নাহ ভাই, খামাখা সময় নষ্ট করাইলেন। এই দামে এই সেট পাইবেন জীবনেও??
--না পাইলে নাই!!
--৮৫০০ হইলে নিবেন??
--নাহ!!
--ঠিক আছে।
ছেলেটি চলে যায়। ওরা তিনজন একে-অন্যের দিকে তাকায়। কি করবে ভেবে পায় না।
--বাদ দে। চল আবার ঘুরা শুরু করি। ইফতারীর সময় প্রায় হয়ে এল। ইফতারীর আগেই সেট কিনতে হবে।
পারভেজ তাড়া লাগায়। ওরা আবার ঘুরা শুরু করে। কিন্তু সানি-জনি দুইজনেরই মন পড়ে আছে সেই সেটে!!!!

ঘুরতে ঘুরতে একটু পর আবার সেই ছেলেকে দেখতে পায় ওরা। ওদের দেখে ছেলেটি এগিয়ে আসে।
--বস, ৮০০০ টাকা দেন। নিয়া যান সেটটা।
কিছুক্ষন গুতোগুতির পর ছেলেটা ৭০০০ টাকায় রাজি হয়ে যায়। জনি তো আনন্দে আত্নহারা!! ও ভাবতেই পারেনি এই দামে এই রকম দামী একটা সেট পেয়ে যাবে!!

--বস এইখানে সেটটা দেয়া যাবে না। এখানে সেকেন্ডহ্যান্ড সেট কেনা-বেচা করতে দেখলে দোকানদাররা ক্ষেপে যায়। আমি ১০মিনিট পর মার্কেটের গেটের সামনে আসতেছি। আপনারা ওইখানে আসেন।
সেট কেনার আনন্দে অন্য কোন ভাবনা মাথায় আসে না জনির। ওরা তিনজন মার্কেটের গেটের সামনে রাস্তায় অপেক্ষা করতে থাকে।
ছেলেটি ১৫মিনিট পর হাজির হয়।
--বস টাকা দেন।
--সেট?
--দিতাছি। আগে টাকাটা গুইনা নেই। এখানে বেশিক্ষান দাড়ানো যাইব না।
--ঠিক আছে, এই নেন।
জনি ৭০০০ টাকা বের করে দেয়। ছেলেটি দ্রুততার সাথে টাকা গুনে নিয়ে পকেট থেকে সেটটা বের করে। জনির হাতে সেটা গুজে দিয়ে "আসি বস, আপনারাও এইখান থেকে চলে যান, দাড়াইয়েন না" বলেই খুব দ্রুতই ভিড়ের সাথে মিশে যায়।
জনি একটু অবাক হয়। তবে কি মনে করে ওরাও দ্রুততার সঙ্গেই অন্যদিকে চলে যায়।

এরি মধ্যে ইফতারীর সময় হয়ে যায়। ওরা একটি হোটেলে ঢুকে ইফতার করার জন্য। এরমধ্যে সেটটা আর দেখার সময় পায় না জনি।
ইফতারীর পর পাশের মসজীদ থেকে নামাজ পরে এসে আবার সেই হোটেলে বসে ওরা। চায়ের অর্ডার দিয়ে জনি পকেট থেকে সেটটা বের করে।
--কিরে সানি, মোবাইলটা অন হচ্ছে না কেন??
--তাই নাকি?? আমি তো তখন দেখলাম ফুল চার্জই ছিল। দেখি তো।
সানি সেটটা হাতে নিয়ে চমকে যায়। আগের ছেয়ে অনেক হাল্কা মনে হয় সেটটি। তখন হাতে নিয়ে বেশ ভারী মনে হয়েছিল। এরপর সেটটি ভাল করে দেখতে গিয়ে ওর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে!!
ওটা আসলে কোন সেট না। একটি নকিয়া এন৭০ সেটের কেসিং। কেসিং এর দুই পার্ট আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো!!
--কিরে কি হইছে?? সেট অন হয়না কেন??
উদ্বিগ্ন জনি প্রশ্ন করে সানিকে।
--দোস্ত, আমরা তো ধরা খাইছি!
--মানে???!!
--এইটা তো সেটটা না। কেসিং!! দুই পার্ট আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো!
--কি!!!!!!!!!!!
জনি পুরোপুরি বিমূঢ় হয়ে যায়। ওর মাথা একদম শূন্য হয়ে যায়!!
--কি করব এখন আমি???
পারভেজ আর জনিকে ওখানে বসিয়ে রেখে সানি এক দৌড়ে আবার ইস্টার্ন প্লাজায় চলে আসে ওই ছেলেটা যদি পাওয়া যায়-এই আশায়। কিন্তু অনেক তন্ন-তন্ন করে খুজেও ওকে পায়না সানি।
--কি করব এখন আমি???
--চিন্তা করিস না দোস্ত। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন বাসায় চল।
জনিকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে সানি। ওর জন্যই এত গ্যাঞ্জাম। ও যদি অহেতুক এত আগ্রহ না দেখাতো..................

বাংলামটর থেকে একটা লোকাল বাসে উঠে ওরা। সানি-জনি সামনেই গেটের পাশে সিট পায়। পারভেজ পায় একদম পিছনে।

জনি জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। চোখ দিয়ে দুই-এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে..................

বাস ফার্মগেটে এসে লোক উঠানো-নামানো শুরু করে। রাত বাজে তখন ৮টা।
সানিও মন খারাপ করে বসে আছে। বাস যখন আস্তে আস্তে চলতে শুরু করে তখন একটি ছেলে দৌড়ে বাসে উঠে পরে। এবং সিট না পেয়ে দাড়ায় সানির পাশেই।
অন্যমনস্ক সানি হঠাৎ করে দেখে ওর পাশে দাড়ানো ছেলেটির গেঞ্জিতে বড় করে লিখা "GAP"। সেই ছেলেটির চেহারা সানি ভাল করে দেখনি। কিন্তু এটা ওর ঠিকই মনে আছে যে ওই ছেলের গেঞ্জিতেও লিখা ছিল "GAP"!!!! বাসে ভেতর আলো কম, তাই গেঞ্জির রং ভালোভাবে বোঝা না গেলেও "GAP" লেখাটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। "GAP" লিখা গেব্জি অনেকেই পরে। অনেক কমন। সানির নিজেরও আছে একটা ছাই কালারের। তবুও কিছুটা ইতস্তত করে সানি জনি কে ডাক দেয়।
--এই শোন, দেখত, এই ছেলেটা সেই মোবাইলওয়ালা ছেলেটা না??
সানি ফিসফিস করে বলে জনিকে। জনি এতক্ষন খেয়াল করেনি ছেলেটিকে। সানি বলার পর ভালো করে তাকায়।
বাসের ভেতর আলো কম। তবুও সেই ছেলেটির চেহারা জনি জীবনেও ভুলবে না! ওর ছেলেটিকে চিনতে ভুল হয় না।
--সানি, এই সেই ছেলে, এই সেই!!!!
চেচিয়ে ওঠে জনি!!

এরপরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে যায়। ওই ছেলেটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সানি ওর কলার চেপে ধরে কয়েক ঘা লাগায়। ছেলেটি চেচাতে থাকে "আমি কি করছি ভাই, আমারে মারেন ক্যান" এই বলে। পরে ছেলেটি চিনতে পারে ওদেরকে, কিন্তু এমন ভান করতে থাকে যে ওদেরকে চেনে না, জীবনেও দেখে নাই!! সানি অন্ধের মত মারতে থাকে ওকে, আর জনির শুধু এক কথা "আমার টাকা দে"!! অন্যদিকে পারভেজ পিছন থেকে সামনে এসে বাসে অন্যদের মূল ঘটনা খুলে বলায় ব্যস্ত। বাস কিন্তু এদিকে চলছে, আগারগাও চলে এসেছে। আগারগাও মোড়ে সেদিন কোন কারনে কিছু পুলিশ দাড়িয়ে ছিল। তাদের দেখে বাস ড্রাইভার ওদের সবাইকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়।

এতক্ষন শক্ত হয়ে থাকা ছেলেটি পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যায়। সে সানিকে ফিসফিস করে বলে,"ভাই, আপনার টাকা ফেরত পাইলেই তো চলে?? পুলিশরে কিছু কইয়েন না ভাই, আমি টাকা দিয়া দিতাছি"। এদিকে জনি পুলিশদের কাছে গিয়ে সব খুলে বলে। সানি চোরটাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এবার শুরু হয় পুলিশী একশন!!! ২-৩ জন পুলিশ মিলে তাদের ডান্ডা দিয়ে সমানে পেটাতে থাকে ওকে। এক পুলিশ তো পেটাতে গিয়ে পা পিছলে পরেই গেলেন!!!! তার অবস্থা দেখে এত দুঃখের মাঝেও জনির হাসি পেল!

ছেলেটির পকেট ঘেটে ২টি কমদামী মোবাইল সেট আর মানিব্যাগ ঘেটে জনির ৭০০০ টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু সেই নকিয়া এন৭০ আর পাওয়া যায়নি।
ওই মোবাইল সেট দুটোও সে অন্য এক ছেলের কাছ থেকে একই ভাবে চুরি করেছে। সানি ওই সেট দুটা তার আসল মালিককে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

--চল জনি, সেট কিনতে যাই।
--আরে নাহ, আজকে আর কিভাবে,অনেক দেরী হয়ে গেছে। কালকে যাব।
--ওকে!

আগারগাও থেকে আবার ওরা বাসে ওঠে বাড়ি ফিরার উদ্দেশ্যে। জনি আবারো জানালার পাশে বসে। এবারো ওর চোখে পানি দেখা যায়। কিন্তু এটা আনন্দের কান্না............


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ⓉⓊⓇⓏⓄ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

ইচ্ছাপূরণ

সন্ধ্যা ৭:৫০। শাহেদ বারের সামনে এসে উপস্থিত হল। না, বারে আমোদ-ফুর্তি করতে আসেনি ও। এটা ওর কর্মস্থল। দেশ থেকে হাজার মাইল দুরে এই আমেরিকায় ও নিজের এবং দেশে থাকা তার পরিবারের পেট চালায় এই বারে কাজ করে। কাজটা ভাল লাগে না। কিন্তু কি আর করা, বেতনটা বেশ ভাল পায় যে! গ্রামের জমি বিক্রয় করে, ধার-দেনা করে অনেক কস্টে ৬ মাস এই দেশে এসেছে ও। এখনো ধারের সব টাকা শোধ করতে পারেনি। কবে যে পারবে.........!!!

অনেক ছোটবেলায় বাবাকে হারায় শাহেদ। তখন ২ কি ৩ মাস বয়স ওর। সম্পত্তির লোভে ওর ছোট চাচাই ওর বাবাকে খুন করে! এরপর থেকে অনেক কস্ট করে ওর মা ওদের ৩ ভাইকে মানুষ করেছে। ওর বড় দুই ভাই এখন ঢাকায় থাকে। একজন বেকার, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। কোন কাজেই নাকি তার মন বসে না! তার পেটও চালাতে হয় শাহেদকে। অন্য ভাইটি ছোট একটি চাকরি করে। নিজের বউ-সন্তান নিয়ে সে নিজের মত করে থাকে। মায়ের খোজখবর নেয় না সে। তাদের মা বরিশালের একটি গ্রামে একা একা থাকেন। তার জন্য সবসময়ই খুব দুশ্চিন্তায় থাকে শাহেদ। দেশ থেকে এত দূরে পড়ে আছে সে শুধু তার মায়ের একটু সুখের জন্য, তার মা যেন একটু আরাম-আয়েশে থাকে। একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছে ও। মাকে ওর নিজের কাছে নিয়ে আসবে। দেশ ছেড়ে আসার সময়ই এই কথা ঠিক করে রেখেছিল ও। দেনাটা শোধ করেই মাকে নিয়ে আসবে—এসব সাতপাচ ভাবতে ভাবতে ও বারে প্রবেশ করে।

শাহেদ বারের এসিস্টেন্ট ম্যানেজার। ওর কিন্তু রাতের শিফটে আসার কথা না। শাহেদ যেহেতু নতুন, তাই সে রাতে ডিউটি করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি এখনো। তবে আজ রাতের শিফটে যে এসিস্টেন্ট ম্যানেজার, সেই মাইকেল অসুস্থ, তাই ম্যানেজার ফোন করে তাকে আর্জেন্ট আসতে বলে। রাতের শিফটে কোনদিন বারে আসেনি ও। তবে শুনেছে রাতে অনেক জমজমাট থাকে বার। অনেক মানুষকে সামলাতে হয়। বেতনও তাই বেশি। ইসসস, কবে যে রাতের শিফটে পার্মানেন্ট হব......!!!

রাত ১২:৩০। দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছে না শাহেদ। ক্যাশে বসেছে সে। এত্ত মানুষ!! দিনে এত মানুষ থাকে না। তাই ওর অভ্যাস নেই এত মানুষ সামলানোর। তবে উপভোগ করছে ও। ম্যানেজারকে দেখানোর চেষ্টা করছে যে ওকে রাতের শিফটে ট্রান্সফার করলে পারবে বার সামলাতে!! তখন দুটো পয়সা বেশি পাবে, মাকে তাড়াতাড়ি এখানে আনতে পারবে......!!!

রাত ৩:৩০ টা। বার প্রায় ফাকা এখন। আরো আধা ঘন্টা বার খোলা থাকবে। ক্যাশবক্সের দিকে তাকিয়ে আছে শাহেদ। এত্ত টাকা! ও সারা বছরেও যে টাকা ইনকাম করতে পারবে না তার চেয়েও বেশি টাকা পড়ে আছে ক্যাশে!! যেমন দেশ তেমন তার মানুষ! বারে এসে কেউ এত টাকা উড়ায়???!! হাসি পায় শাহেদের।

রাত ৪ টা। বার পুরা ফাকা। ওয়েটাররা তাদের ইউনিফর্ম চেঞ্জ করতে চলে গেছে পিছনের রুমে। বাউন্সাররাও কেউ নেই এখন। পুরো বারে শাহেদ এখন একা। টাকার হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সে। খুব ঘুম পেয়েছে। টাকাটা গুনে রেখেই চলে যাবে সে।

হঠাৎ বারে ২ জন নিগ্রো প্রবেশ করে। ওদের দেখেই শাহেদ টাকাগুলো নামিয়ে রাখে। নিগ্রোদের ব্যপারে শুরুতেই ওদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ওরা ঝামেলা পাকাতে ওস্তাদ!
--হেই গাইজ, বার বন্ধ হয়ে গেছে।
শাহেদ বলে উঠে ওদের উদ্দেশ্যে। উদ্বেগ টুকু চাপা দিতে পারে না ও।
--আমরা কিছু পান করতে আসিনি। এসেছি কিছু নিতে।
একথা বলেই ২ জনই তাদের জ্যাকেটের ভিতর থেকে ধারালো ছুরি বের করে!
শাহেদের মুখ হা হয়ে যায়! কি করবে ও! সাহায্যের আশায় এদিক-ওদিক তাকায়, কিন্তু কেউই তো নেই!
--ক্যাশে যা আছে সব দিয়ে দাও, ম্যান। তোমাকে কিচ্ছু বলব না।
ভেবে পায় না শাহেদ কি করবে ও। সব টাকা দিয়ে দিলে কি চাকরি থাকবে ওর??!! এই দেশে আরেকটা চাকরি যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব এখন! খাবে কি, মাকে কিভাবে আনবে ও.........!!!!

--হেই ম্যান, আমাদের কথা কানে যাচ্ছে না তোমার?? যা আছে সব দিয়ে দাও, নয়ত তোমাকে মেরে সব নিয়ে নেব আমরা!!
টাকা দিয়ে দেয়ার সিন্ধান্ত নেয় ও। বারের অন্য সব লোকজন কই?? টাকা বাচানোর দায়িত্ব কি ওর একার নাকি!! চাকরি গেলে যাক। জানটা তো বাচাই!!!!
ক্যাশে থাকা কয়েক হাজার ডলার তুলে দেয় ও ওদের হাতে। শালারা, আমি সারা বছরেও যে টাকা ইনকাম করতে পারবে না তার চেয়েও বেশি টাকা তোরা ৫ মিনিটে কামিয়ে নিলি!!! রাগে গা জ্বলে ওঠে ওর! কিন্তু কি আর করা!!!!!!!!!!!
টাকা নিয়ে দরজার কাছে চলে গিয়ে আবার দাড়িয়ে পরে ওরা। শাহেদ তখনও কাউন্টারেই বসে আছে।
--হেই, ও তো আমাদের চেহারা দেখে ফেলেছে। পুলিশকে আবার বলে দেবে না তো??
দুইজনই ঘুরে তাকায় ওর দিকে। ওদের চাহনী দেখে শাহেদের শিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়!!!
--না না, কাউকে কিচ্ছু বলব না আমি!! প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও! তোমরা যা চেয়েছো সবই দিয়েছি! প্লিজ লেট মি গো!!!!
ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে কথাগুলো বলে শাহেদ। কিন্তু ওদেরকে সন্তুস্ট করা গেল না!!
একজন এগিয়ে এসে চেপে ধরে ওকে। ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে ও!
মাটিতে পড়ে আছে শাহেদ, রক্তে মাখামাখি। প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। গলা চিরে একটা চিৎকার দিয়ে মাকে ডাকতে ইচ্ছা করছে ওর। কিন্তু শুধু গোঙ্গাতে ছাড়া আর কিছুই আসছে না গলা দিয়ে!!!
মা.........মাগো.........ওরা আমাকে বাচতে দিল না মা!!!!!
গোংগানি থেমে যায়............



পরিশিস্ট : শাহেদের ইচ্ছা পূরণ হয় শেষ পর্যন্ত। ওর মা আমেরিকা আসার সুযোগ পায়। শাহেদের লাশ আর সাথে আমেরিকা সরকারের দেয়া ক্ষতিপূরনের টাকা নিতে!!! জীবন গেলেও ওর ইচ্ছা তো পূরণ হয়েছে!!!!!


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ⓉⓊⓇⓏⓄ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

বিএনসিসি এবং একটি বিয়ের গল্প

--কি চাচা......শুনলাম আপনি নাকি মনির ভাইয়ের বিয়ে ভাইঙ্গে দিছেন?
--আরে আর বইলো না ভাইস্তা......মাইয়া হইল গিয়া নোয়াখালীর। তুমিই কও, বিএনসিসি’র মানুষ কোনদিন ভাল হয়??? তোমার মনির ভাইরে এইকথা বুঝাইতেই পারতেছি না! তোমরা ওরে একটু বুঝাও......

কি বলব আমি? এলাকার বড় ভাইয়ের আব্বা যখন আমার আমার সামনেই চারটি জেলার মানুষের পিঠে “খারাপ মানুষ” এর সিল মেরে দিচ্ছেন, তখন লজ্জায় আমি বলতে পারি না যে আমার নিজের বাড়িও ওই চার জেলার একটিতে!!!

নোয়াখালীর ওই মেয়ের সাথে মনির ভাইয়ের বিয়ের সব কথাই পাকা হয়ে গিয়েছিল। মেয়ে সবদিক দিয়েই ভাল। নামাজী, মাস্টার্স পাশ, দেখতে মোটামুটি সুন্দরী, বাবার ঢাকায় ৫ তলা বাড়ি—বলা যায় বিয়ের বাজারের টপ ক্লাস পাত্রী!!! মনির ভাইয়ের খুবই পছন্দ হয়েছিল মেয়েটিকে। যেদিন দেখে এসেছেন তার পর থেকেই ওর সাথে রেগুলার ফোনে কথা বলে মোটামুটি দুইজনে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ পৌছেছিলেন। সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু হঠাৎই বেকে বসেন মনির ভাইয়ের আব্বা। তাকে নাকি তার অফিসের কলিগরা বলেছেন,
--আরে মতিন সাহেব, আপনি এত ভাল মানুষ, আর আপনি কিনা ছেলে বিয়ে করাচ্ছেন নোয়াখালীতে!! জানেন ওরা কত খারাপ!! বিএনসিসি’র মানুষ কোনদিন ভাল হয় না!!!

এমন উদ্ভট কারন শুনে হতবাক হয়ে যান মনির ভাই। মেয়ে পক্ষও অনেক রেগে যায়। তাদের রাগ করাটাই স্বাভাবিক ছিল, নাকি???
--তারা আমারে কয়কি, “আপনার কোন বিবেচনা নাই মতিন সাহেব?? এমন উদ্ভট কারনে কিভাবে আপনি ঠিক হয়া বিয়ে ভেঙ্গে দেন?? আপনার মত শিক্ষিত মানুষ কিভাবে এমনটা করে?!! এখন আমাদের সম্মানের কি হবে???” এহ...আইসেরে!! নোয়াখাইল্লাগো আবার সম্মান!!!

যাক...কয়েকদিন পর আবারো অন্য একটি মেয়ে দেখা হয়। এবার এই মেয়ে মনির ভাইদের নিজ জেলার। এই মেয়ের বাপেরও ঢাকায় ৫ তলা বাড়ি। তো আমি যেহেতু নেটে বেশ এক্টিভ তাই মনির ভাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি যেসব মেয়ে দেখবেন তাদের ফেসবুকে একাউন্ট আছে নাকি এটা খুজে দেখা, থাকলে একাউন্টটা ঘাটাঘাটি করা—এসব আরকি। তো এ পর্যন্ত অনেক মেয়ের একাউন্টই আমি দেখেছি। এই মেয়ের একাউন্টও দেখার জন্য মনির ভাই আমাকে মেয়েটির নাম আর মেইল আইডি দেন।
--ভাই, একটা সমস্যা।
--কি?
--ভাই এই মেয়ের একাউন্টে দেখলাম রিলেসনসিপ স্ট্যাটাস দেয়া এঙ্গেজড। মেয়ের প্রোফাইল পুরা ওপেন, কোন প্রাইভেসি দেয়া নাই। অনেকগুলা এলবাম দেখলাম, সব মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের সাথে ছবিতে ভর্তি।
--তাই নাকি!
চিন্তিত হয়ে যান মনির ভাই। এই মেয়েটিকেও তার ভাল লেগেছে। দেখতে অনেক সুন্দর। তাছাড়া মেইন কথা তার বিয়ে করা দরকার। আর মাত্র ১মাস পরেই তিনি আমেরিকা চলে যাচ্ছেন।

পরেরদিন আবার দেখা মনির ভাইয়ের সাথে।
--আব্বা তো এসব বিশ্বাসই করতে চাচ্ছেন না। আর তাছাড়া বিয়ের আগে এখন সবাই একটু-আকটু প্রেম করে। ফেসবুকে নিজেকে সেফ রাখার জন্যই এমন রিলেসনসিপ স্ট্যাটাস-এলবাম দেয় অনেক মেয়ে। ওর সাথে আমার কথা হয়েছে কালকে। সে বলেছে ওর এক্স-বয়ফ্রেন্ড নাকি ওর ছবি দিয়ে এমন ফেক একাউন্ট খুলেছে। ওদের মধ্য এখন আর রিলেসেন নেই। আর আমাদের জেলার মেয়েরা অনেক ভাল স্বভাবের। আমার কাছে কি সুন্দর করে সবকিছু স্বীকার করল!
আর কথা বাড়াই না আমি। ওরা সুখে থাকলেই আমি সুখি!

বেশ ধুমধাম করে বিয়ে হয় মনির ভাইয়ের। বিয়ের এক সপ্তাহ পর তারা হানিমুনে যায়। চাচা-চাচীরও মেয়ে পছন্দ হয়েছে। একটু মুডি হলেও মেয়ে খারাপ না। কারন সে তো আর বিএনসিসি না!!!

হানিমুন থেকে ফেরত আসার পর দেখলাম মনির ভাইয়ের মন খারাপ। কি হয়েছে জিজ্জেস করলে তিনি যা বলেন তার সারমর্ম হচ্ছে—তিনি চাচ্ছিলেন বাচ্চা নিতে। এতে ভাবীকে আমেরিকা তাড়াতাড়ি নিতে পারবেন। কিন্তু ভাবী কোনমতেই তাতে রাজী নন। এই নিয়ে তাদের মধ্য ঝগড়া হয়েছে।
--আসলে বুঝলি ও-ই ঠিক বলছে, আরে ওর পড়া তো এখনও শেষ হয় নাই। এখন এসব ঝামেলা নেয়া ঠিক না।
মনির ভাই আমাকে বোঝাচ্ছিলেন নাকি নিজের মনকেই বোঝাচ্ছিলেন জানিনা।

মনির ভাই বিয়ের ৩ সপ্তাহ পর চলে যান আমেরিকা। আমরা অশ্রুসজল নয়নে তাকে বিদায় জানাই। আমার বড় ভাই নেই, তাকে আমার বড় ভাইয়ের মতই দেখি আমি।

মনির ভাই যাওয়ার ১ সপ্তাহ পরই উনি আমাকে ফোন দেন।
--এই শোন, তোর ভাবীর মোবাইল অফ কেন? আমাদের বাসার টিএন্ডটিও কেউ ধরছে না। তুই গিয়ে দেখতো।

আমি ছুটি ওনাদের বাসায়। ফিয়ে দেখি চাচা মুখ শক্ত করে বসে আছেন, চাচী কাদছেন। টিএন্ডটি বেজেই চলেছে।
--কি হয়েছে চাচা।
চাচা আমাকে এরপর যা শোনান এতে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই!
ভাবী বিয়েতে পাওয়া ৫ ভরি গয়না, ৪০ হাজার টাকা দামের দুটি বিয়ের শাড়ী, একটি আমেরিকা থেকে আনা আইফোন, ভাবীর হাতখরচের জন্য মনির ভাইয়ের দিয়ে যাওয়া ২০০ ডলার---এসবকিছু নিয়ে এবং একটি চিঠি রেখে দিয়ে ভাবী বাসা থেকে পালিয়ে গেছেন!!!

চিঠিতে লিখা আছে যে ও ওর বেকার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করার জন্যই এই নাটকটুকু করেছিল। নতুন সংসার শুরুর জন্য ওদের টাকার দরকার ছিল। এজন্য আগের অনেক বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও আমেরিকা ফেরত মনির ভাইয়ের সাথে বিয়েতে রাজি হন উনি শুধু টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যই!!

কি বলব এমন মেয়েকে??? যে টাকার জন্য অন্য মানুষের সাথে শুতেও রাজি তাকে কি বলব???

এখন চাচা কাদেন, চাচি কাদেন আর মনির ভাই......উনি এখন সারাদিন কাজ করেন আর রাতে বারে সুরার নেশায় বুদ হয়ে থাকেন!!

-_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_--_-_-_-

এখন এই ঘটনাটি বলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে ভাল-খারাপ সব জেলায়ই থাকে। ভাল-খারাপ মিলেই মানুষ। কিন্তু চারটি জেলার মানুষ খারাপ আর বাকি ৬০ জেলার মানুষ ফেরেস্তা—আমাদের দেশের মানুষের এই ধারনা ভুল। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যখন আমার গ্রামের বাড়ির কথা জেনে মানুষ আমার দিকে অন্য দৃস্টিতে তাকায় তখন ভীষন অসহায় মনে হয় নিজেকে!!!

আর আরেকটা কথা, খোজখবর না নিয়ে তাড়াহুড়ো বিয়ে করা উচিত নয়। বিয়ের আগে ছেলে/মেয়ে সম্পর্কে ভাল করে খোজখবর নিতে হবে। আমার মতে বিয়ের আগে কমপক্ষে ২-৩ মাস ছেলে-মেয়েকে একে অপরকে জেনে নেয়ার সময় দেয়া উচিত। যে দিনকাল পড়েছে...তাতে এসব ঘটনা এখন থেকে রেগুলারই ঘটবে। তাই সবধান থাকা ভাল............


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ⓉⓊⓇⓏⓄ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

চোখ

আব্বু আমাকে রেলস্টেশনের ওয়েটিংরুমের বেঞ্চে বসিয়ে রেখে গেলেন ট্রেনের টিকেট কাটতে। যাব সিলেট, আমার মামার বাড়িতে আমি আর আব্বু। অনেকদিন পর মামা বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছি। ফিলিং সো এক্সাইটেড!!!

সাদা ছড়িটা ভাজ করে পাশে রাখলাম। হ্যা, আমি একজন জন্মান্ধ। এই পৃথিবীর রুপ-রস কিছুই নিজ চোখে দেখা হয়নি আমার। আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার মা মারা যান, আর আমি হই অন্ধ। আমার বাবা এরপর আর বিয়ে করেননি। আমাকে অনেক কস্ট করে এতদুর এনেছেন বাবা। অন্ধ হলেও জীবনযুদ্ধে হার মানিনি আমি। ব্রেইল পদ্ধতিতে এবার এসএসসি পাশ করেছি আমি।

আমার চোখ দুটি ঠিক করানোর জন্য বাবা সাধ্যমত অনেক চেস্টাই করেছেন, অনেক ডাক্তারের কাছে ছুটে গেছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। কারন আমার চিকিৎসা একটাই, তা হল কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন! কিন্তু অনেক চেস্টা করেও আমার জন্য একজোড়া কর্ণিয়া জোগাড় করা যায়নি, এদেশের মানুষ যে মৃত্যুর পরও নিজের চোখ জোড়া হারাতে রাজি নয়!!!

আমার পাশে বসা কেউ একজন হেসে উঠলেন হঠাৎ করে। শব্দের উৎসের দিকে মাথা ঘুরালাম আমি।
--কি ব্যপার, হাসছেন কেন?
..................................................................

আমি আতিক। একটি ওষুধ কোম্পানিতে জব করি। সিলেট যাব অফিসের কাজে। ট্রেন আসবে আরো আধা ঘন্টা পরে। টাইম পাস করার জন্য বুকস্টল থেকে “১০০১ টি হাসির কৌতুক” নামক বইটি কিনে ওয়েটিংরুমের বেঞ্চে বসে পড়ছিলাম। কিছুক্ষন পর এক ভদ্রলোক একটি ছেলেকে আমার পাশে বসিয়ে রেখে গেলেন। ছেলেটির বয়স ১৬-১৭ হবে।
বইটি বেশ ভালই। ভাল ভাল কৌতুক আছে। এরমধ্যে একটি পড়ে এত হাসি পেল যে একটু শব্দ করেই হেসে ফেল্লাম আমি............
আমার পাশে বসা ছেলেটি আমার উদ্দেশ্যে কিছু বল্লো বোধহয়। ফিরে চাইলাম ওর দিকে এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ছেলেটি অন্ধ। এর আগে বুঝতে পারিনি আমি। আহারে বেচারা!
--সরি, আমাকে কিছু বল্লে?
--আপনি হাসছিলেন কেন?
--ওহ আচ্ছা, একটা কৌতুকের বই পড়ছি আমি। একটা কৌতুক পড়ে হাসি পেল।
হাসিমুখে জবাব দিলাম আমি।
--কি কৌতুক? আমাকে বলবেন প্লিজ!
--সিউর। এক লোক দেখল যে তার এক বন্ধু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে। তখন সে তাকে জিজ্ঞেস করল যে কি ব্যাপার, তুই খোড়াচ্ছিস কেন?
তখন তার বন্ধু জবাব দিল, “আমার দাতে খুব ব্যথা করছে তাই খোড়াচ্ছি!!!”
--হাহাহহাহাহাহাহাহাহহাহাহাহাহাহাহা......
ছেলেটি প্রান খুলে হাসছে। এত প্রান খুলে কাউকে হাসতে দেখিনি অনেকদিন!! মনটাই ভাল হয়ে গেল!

কিছুক্ষন পর ছেলেটি আবার ফিরে চাইল আমার দিকে,
--আপনার যখন কাজ হয়ে যাবে তখন কি আমাকে দেবেন প্লিজ?
অবাক হলাম আমি! কি চাইছে ও? বইটা?!
--কি, বইটা?
--না.........আপনার চোখ দুটো!!!!
কি কারনে যেন আমার দৃস্টি হঠাৎ ঝাপসা হয়ে গেল! চোখে কোন ময়লা গেল নাকি? নাকি চোখে পানি চলে এলো!!!!!!!!!!!!

আপনি চাইলে মৃত্যুর পরও আপনার চোখ দুটি বেচে থাকতে পারে অন্য কারো চোখ হয়ে। দয়া করে মরনোত্তর চক্ষুদান করুন। আপনার-আমার সামান্য ইচ্ছাই যথেষ্ঠ। চোখ দান করার বিষয়ে কোনো ধর্মেই বারণ নেই। কর্নিয়া সংগ্রহের পর বাহ্যিক চেহারা অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু কর্নিয়া সংগ্রহ করে ফাঁকা স্থানে একটি আই ক্যাপ বসিয়ে দেওয়া হয়, যা অপরিবর্তিত চেহারা নিশ্চিত করে। মরণোত্তর চক্ষুদানের জন্য সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিতে যোগাযোগ করুন।

আমার মৃত্যুর পর যে জিনিস আমার বা আমার পরিবারের কোন কাজে লাগছে না সে জিনিসটা কি এমন কাউকে দিয়ে দেয়া যায় না যেটির জন্য সে বছরের পর বছর অপেক্ষা করে আছে? ওয়েটিংরুমের বেঞ্চে বসে থাকা ওই ছেলেটির মত হাজার হাজার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অপেক্ষা করে আছে, আমাদের এই সামান্য ইচ্ছাটুকুর কারনে ফিরে পাবে নিজেদের চোখ, দেখতে পাবে এই অপরুপ পৃথিবীকে আপনার চোখ দিয়েই!!!


এই বিজ্ঞাপনটি অবলম্বনে রচিত---
http://www.youtube.com/watch?v=75HjFi4_r10


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ⓉⓊⓇⓏⓄ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

অতি আনকমন নামের সুফল!!!

নামে কি আসে যায়???

এই কথাটা অনেকাংশে সত্য হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নয়!!! আমার নাম নিয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কাহিনী বলব আজকে আপনাদের।:|:|

আমার মায়ের অনেক সখ ছিল তার ছেলে-মেয়ের নাম হবে আনকমন টাইপের। তো আমার জন্মের পর আমার ডাকনাম কি হবে- এটা নিয়ে আমার পুরো পরিবারেই হলস্থুল লেগে গেল। পরিবারের প্রথম ছেলে সন্তান বলে কথা!;) সবাই নিজ নিজ পছন্দ মত নামে আমাকে ডাকা শুরু করল।কিন্তু আমার মায়ের সাফ কথা-—ডাকনাম হতে হবে একদম [sb]আনকমন[/sb] এবং সেই সাথে সুন্দর! ::D

তো বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও আমার ডাকনাম আর রাখা হয় না! /#)  শেষে মা আমাদের দুঃসম্পর্কের আত্নীয় এক সাংবাদিকের (যিনি এখন একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক) আশ্রয় নেন। তিনি সব শুনে বসে যান আমার জন্য একটি “আনকমন এবং সেই সাথে সুন্দর” নাম সার্চ দা খোঁজ করার কাজে!:P:P

অবশেষে ৩-৪দিন পর আমার জন্য একটি অসাধারন নাম খুঁজে বের করার কাজে সফল হন তিনি! :D

আমার বাবা দুইটি খাশি জবাই দিয়ে আমার নাম রাখেন তূর্য!!! B-)B-)

অতি আনকমন একটি নাম!:D আমার মা অনেক খুশি! তার মনের ইচ্ছা যে পূরন হয়েছে!!!! আমার কত আত্নীয় যে এই আনকমন নাম উচ্চারন করতে গিয়ে দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন তার হিসাব দেয়া মুশকিল!:-/ অনেকের কাছে আবার আমার মা-বাবাকে [sb]“ছেলের হিন্দুয়ানী নাম কেন রাখা হল”[/sb]-এই প্রশ্নের জবাব দিতে হত!! ছোটবেলায় বেশ অসুস্থ থাকতাম মাঝে মাঝে, অনেকে বলত এমন “হিন্দুয়ানী” নামের জন্যই নাকি আমার এই অবস্থা!!!! অবশ্য আমার মা-বাবা এসবে কান দেননি।  :-<  :-<

এই ফাঁকে বলে নেই যে বাংলা একাডেমীর ডিকশনারী অনুযায়ী “তূর্য” শব্দটির অর্থ রণসিংগা, প্রাচীন ভারতের যুদ্ধে ব্যবহ্রত বাশি।  :#)

এই আনকমন নামের সুখ আমার কপালে বেশিদিন সইলো না!! আমাদের পাশের বিল্ডিং-এ যে নতুন ভাড়াটিয়া এল তাদের ছেলের নামও তূর্য!! আমার মা যথেস্টই হতাশ হলেন!! কিন্তু কি আর করা! এলাকায় ২টি তূর্য এসে গেল.........  /#)  /#)

মা ভয়ানক হতাশ সেদিন হলেন যেদিন শুনলেন যে আমাদের পাশের বাসার নতুন ভাড়াটিয়ার ছেলের নামও সেই একই!!!! :#|  এতদিন নাহয় পাশাপাশি বিল্ডিং-এর দুই ছেলের নাম ছিল ছিল এক, এখন তো পাশাপাশি দুই ফ্লাটের ছেলের নামই এক!!! বুঝুন অবস্থা!! /#)

বেশি সমস্যার শুরু হল তখন থেকেই। সেইসময়ে সবার বাসায় ফোন থাকত না, আমাদের এবং আমাদের পাশের ফ্লাটেও ফোন ছিল না। আমাদের ফোন আসত আমাদের বাড়িয়ালার বাসায়। তো কেউ যখন বলত “তূর্যর আম্মাকে ডেকে দিন” এবং ফোন যদি ধরত বাড়িয়ালার কাজের মেয়ে তাহলেই হয়েছে!!! কোনবারই সেই মেয়েটি সঠিক “তূর্য”র আম্মাকে ডেকে দিতে পারেনি!!! /#)  এমনও হয়েছে অনেক্ষন কথা বলার পরেও আমার আম্মা বুঝতে পারেননি এটি তার ফোন নয়, এটি তূর্য নাম্বার-২ এর আম্মার ফোন!!!  :|

যাক, ভর্তি হলাম স্কুলে।

প্রথমদিন ক্লাস করে এসে সবাই খুব এক্সাইটেড থাকে। আর আমি হলাম বিমর্ষ!!! কারন ক্লাসে যে আমার সাথে আরো ২জন তূর্যের দেখা হয়েছে!!! একই ক্লাসে তিন তিনজন তূর্য!!! কপাল আর কাকে বলে!!!  :(  :(  :(

স্কুলে পুরো ১০টা বছর আমাকে নাম সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এতো বেশি ঝামেলা হয়েছে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব বুঝতে পারছি না!!! কতবার যে অন্য তূর্যর দোষে আমি মার খেয়েছি বা আমার দোষে অন্যরা মার খেয়েছে এর কোন ইয়াত্তা নেই!!  :|

একবার রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার আগেই রটে গেল তূর্য ফার্স্ট হয়েছে!! আমার বন্ধুরা তো আমার পকেট ফাঁকা করে টিফিন খেয়ে নিল। পরে দেখা গেল আমি না, ফার্স্ট হয়েছে অন্য তূর্য!!! মাথার চুল ছিড়ব নাকি অন্যকিছু ছিড়ব বুঝছিলাম না!!! X(X(

স্কুল লাইফ শেষ করলাম অনেক কস্টে......

কলেজে ভর্তি হয়ে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে আমার সেকশনের পূরো ১২০ জন স্টুডেন্টের মধ্যে আমি একাই তূর্য!!!!!

আমার খুশি দেখে কে!!! ;);)

তবে বরাবরের মত আমার এই সুখ বেশিদিন সইলো না!!!

এক স্যারের কাছে কেমেস্ট্রি পড়তাম প্রাইভেট। ওনার ওখানে আরেক তূর্য জুটে গেল!! তবে এটা আমার গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল, অতি আনকমন নামের সুফল!!!  /#)  /#)

তো আমি ঐ স্যারের ব্যাচের একটি অতি রুপবতী মেয়ের প্রেমে পড়লাম!!! :P

সাহস করে একদিন মেয়েটিকে একটি চিঠিতে মনের কথা লিখে চালাকী করে ওর বইটা নিয়ে ওটার মাঝে গুজে দিলাম। ;)এমনভাবে দিলাম যাতে ও এখন টের না পেলেও বাসায় গিয়ে দেখতে পায়। এবং এখানেই জীবনের অন্যতম বড় ভুল করলাম!! :((

কয়েকদিন পরে সেই তূর্য নাম্বার– ২ আমাকে হঠাৎ করে ডেকে নিয়ে বলে,

[si]--দোস্ত আমার তো লটারী লাগছে!!

--কিভাবে?

--তুই কি সাথীকে কোন চিঠি দিছিলি?

--তোকে কে বল্লো??!![/si]
অবাক হলাম আমি!!:-/

[si]--আরে সাথী তো তোর চিঠি পড়ে ভাবছে আমি ওইটা লিখছি। আমাকে ও কালকে রিপ্লাই দিছে। এই দেখ।
[/si]
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল!!! সাথী লিখেছে যে তোমার চিঠিটা পড়ে নিজেকে আর বেধে রাখতে পারলাম না!! আই লাভ ইউ টু!!!! :((:((

[si]--এটা তো ঠিক না। চিঠি তো আমি লিখছি। তুই তো আর লিখিস নাই। আমি এখনি সাথীকে গিয়ে সব জানায় দিব।

--প্লিজ দোস্ত আল্লাহর কসম লাগে এমন করিস না!!! আমি আর তুই না মিতা!! প্লিজ সাথীকে আমার জন্য সেক্রিফাইস কর দোস্ত!!
[/si]
কি আর বলব!!! করে দিলাম সেক্রিফাইস!!! অতি আনকমন নামের সুফল!!! X(X(

এই জীবনে কত তূর্যের সাথে যে দেখা হল তা গুনে শেষ করা যাবে না!!! বাংলাদেশের মা-বাবারা যে সন্তানের জন্য খালি আনকমন নেমই খোঁজেন, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছি আমি নিজে ও অন্য সকল তূর্যরা!!  /#)  /#)

--------------------------------------------------

বাই দা ওয়ে, যাওয়ার আগে আরেকটা নিউজ দেই। পরে ঐ তূর্য নাম্বার -২ আর সাথীর ব্রেকআপ হয়ে যায়। সাথী নাকি ওকে বলেছিল, "চিঠি পড়ে তোমাকে যতটা রোমান্টিক ভেবেছিলাম আসলে তুমি ততটা রোমান্টিক না!!" :|:|

:#(:#(:#(:#(:#(:#(:#(



~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ⓉⓊⓇⓏⓄ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~